লোকে বলে মৃত্যুর আগের মুহুর্তে নাকি পুরো জীবনটা একটা চলচ্চিত্রর মতন চোখের সামনে ভেসে ওঠে ৷ মনে হয় না কথাটা সত্যি ৷ এই মুহুর্তে আমার সামনে আছে সুধু শুন্য়তা ৷ সেই শুন্য়তায় আমি বিলীন হো যেতে চাই ৷ এই শুন্য়তাতেই আমার মোক্ষ ৷ আমার দয়নন্দিন জীবনের যন্ত্রনার থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায় এই শুন্য়তাকে আপন করে নেওয়া ৷
অথচ এরকম কিন্তু হওয়ার কথা ছিল না ৷ গ্রামের স্কূল থেকে ৯০% মার্ক্স নিয়ে বোর্ডএর পরীক্ষায় পাস করার পরে সবাই ভেবেছিলো -" হ্যাঁ!! এই ছেলেটা কিছু করবে !!" আমিও বিস্সাস করেছিলাম এবার আমি জীবনে একটা বড় কিছু করবো ৷ বাবা - মার মুখ উজ্জ্বল করবো ৷ তাই ইংরেজি ওনার্স নিয়ে কলেজ এ ভর্তি হলাম ৷ কলেজ এ রেকর্ড মার্ক্স নিয়ে পাস করলাম ৷ আমি তখন আত্মবিস্বসে ভরপুর ৷ ভেবেছিলমা পৃথিবীটাকে নিজের ইচ্ছায় নাচাবো ৷ কিন্তু এত বড়ো পৃথিবীকে নাচানো তো সহজ ব্যাপার না ৷ কলেজ থেকে বেরিয়ে শুরু হল চাকরির সন্ধান ৷ কিন্তু একটা সাধারণ গ্রামের ছেলের জন্য কেউ পরোয়া করে না ৷ চাকরির জননো হন্য়ে হয়ে অফিসে-অফিসে ঘুরে বেড়ালাম ৷ কিন্তু চাকরী আর পেলাম না ৷ সব জায়গায় রাজনীতি ৷ উপরমহলে যার contacts আছে, চাকরী সুধু তার-ই ৷ শেষকালে একটা ছোটো কোম্পানি তে সেলসম্যানের চাকরী জুটলো ৷ কাজ -দরজায় দরজায় গিয়ে সাবান বিক্রি করা ৷ কিন্তু এরকম হাজারো যুবক একই কাজ করছে ৷ লোকে কেবল আমার থেকেই জিনিস কিনবে কেনো? কোনক্রমে মাসে 2000 টাকা রোজগার হতে লাগলো ৷ হঠাত্ একদিন সকালে মিলে জিনিস এসে দেখি তালা ঝুলছে ৷ এতদিন মেনে নিতে পারিনি ৷ কিন্তু এবার মেনে নিতেই হল যে আমি সত্যিই বেকার ৷ আবার শুরু হল চাকরির সন্ধান ৷ কিন্তু এই পৃথিবীর ভীরে আমি কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম ৷ বাবা ছোট মুদীখানার দোকানের মালিক ৷ বাবর পয়সায় খাওয়া আর সম্ভব ছিলো না ৷ গ্রামে ফিরে যেতে পারতাম না ৷ কী বলে গ্রামের লোকেদের মুখ দেখতাম আমি? তাই বাধ্য হয়ে এক মহাজনের থেকে টাকা ধার করে ট্রেন প্ল্যাটফর্মে একটা চায়ের দোকান শুরু করলাম ৷ ব্যাবসা খুব ভালো না চললেও মোটামুটি চলছিলো ৷ কিন্তু মহাজনের সুদের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকলো ৷ এদিকে বাড়িতে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন ৷ বাড়ি বিক্রি হয়ে গেলো ৷ অনেক চেষ্টা করেও বাবাকে বাঁচানো গেলো না ৷ বাবার অসুস্থতার জন্য আমি কয়েকদিন আমার দোকান যেতে পারিনি ৷ বাবার শ্রাদ্ধ শেষ হবার পর আমি স্টেশনে গেলাম দোকান খুলতে ৷ দেখি, কেউ একজন আগের রাতে আমার দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছে ৷ সব পুরে গেছে ৷ আমি অনেকটা সময় সেখানেই বসে রইলাম ৷ কতখন বসে ছিলাম আমার মনে নেই ৷ একের পর এক ট্রেন চলে গেল, আসল ৷ কোনকিছুই আর আমার চোখে পড়ছিল না ৷ আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছিলো ৷বাবা নেই, বাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছে, দোকান নেই ৷ চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলাম আমি ৷ পৃথিবীর আলো, বাতাস সবাইকে নিজের শত্রু মনে হতে লাগলো ৷ যেন সবাই আমার কস্ট দেখে হাসছে ৷ আমাকে ব্যণ্গো করছে, আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলছে - " অনেক স্বপ্ন দেখেছিলি না? স্বপ্ন আর বাস্তব ওনেক আলাদা রে!"
ঢং! ঢং! ঢং! ঘড়িতে আটটা বাজে ৷ আমি তখনো বসে ৷ একটা পুলিশ এসে আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে দিল ৷ আমি আস্তে আস্তে চলতে লাগলাং রেল লাইনের ধার দিয়ে ৷ সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না ৷ নিশচ্ছিদ্র অন্ধকার ৷ দূরে একটা পেঁচার ডাক শুনতে পাচ্ছি ৷ পাশে ঝোপের মধ্যে থেকে একটা বেড়ালের আওয়াজ ভেসে আসছে ৷ হঠাত্ একটা ভীষন উজ্জ্বল আলো চোখে পড়লো ৷ দেখি, দুর থেকে একটা ট্রেন আসছে ৷ এই তো!! এইতো আমার ট্রেন এসে গেছে!! এই ট্রেনএ করে আমি চলে যাবো দুরে, বহু দুরে - যেখানে কোনো দুঃখ নেই, কস্ট নেই, হতাশা, বেদনা নেই ৷ ধীরে ধীরে রেল লাইনের ওপর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম ৷ অলোটা আরও তীব্র হতে লাগলো ৷ ট্রেনএর বাঁশীর আওয়াজটা ধীরে ধীরে জোরে শুনতে পাচ্ছি ৷ সেই শব্দ আমার কানে এক মধুর সঙ্গীতের মত শোনাচ্ছে ৷ সব দুঃখ- কস্ট দুর হয়ে যাচ্ছে সেই সঙ্গীতের শব্দে ৷ আমি হাসছি ৷ আলোটা ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগলো ৷ কাছে, কাছে, আরও কাছে.....................................................
বাবা !! মা !! আমি বাড়ি আসছি ৷
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment